বাংলাদেশ ব্যাংক ও রিজার্ভ কোন পথে হাটছে
আমরা অনেকে শ্রীলংকা পাকিস্তানের ঋণ ডিফল্টের কথা বলি। কিন্তু একটা বিষয় আলোচনায় আসতেছেনা যে, বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো গত ছয় মাস ধরে নিয়মিত ডিফল্ট করে যাচ্ছে।
এই ডিফল্ট করার মাধ্যমে ঋণের দায় পরিশোধ পিছিয়ে দিয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকার ভাবতেছে তারা রিজার্ভ কে রক্ষা করবে। কিন্তু, তারা আমলেই নিচ্ছেন না এই ডিফল্টের প্রতিক্রিয়াতে অর্থনীতি বড় আকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী ঝামেলা তৈরি হবে।
একটা দেশ বা একটা ব্যাংক চাইলেই এই ভাবে ডিফলট করতে পারেনা, এর মেজর কন্সিকিউয়েন্স আছে।
এখন পর্যন্ত বড় পরিমান যে ডিফল্ট গুলোর সংবাদ আমি পড়েছি তার মধ্যে রয়েছে, পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির ১.৯৮ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ইন্সটলমেন্টের ৩৮৭.৩৯ মিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধে ডিফল্ট এবং পেট্রোবাংলা এলএনজি সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান কাতার গ্যাস ও ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের কাছে ডেমারেজ ও এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশান প্রতিষ্ঠান সামিট এলএনজি ও এক্সেলারাটে এনার্জির সাথে ক্যাপাসিটি চার্জের অপরিশোধিত বিলের ডিফল্ট।
আজকে বিজনেস পোস্টের রিপোর্ট থেকে জানলাম যে, পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্পের চাইনিজ পার্টনার China Machinery Import and Export Company (CMC) ঋণের দায় পরিশোধ না করাতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং প্রকল্পের পার্টনার হিসেবে, প্রকল্পের সুদাসলের দায় পরিশোধ না করাতে, চায়নাতে তাদের ক্রেডিট রেটিং ডাউন গ্রেড হয়েছে। সিএমসি ঘোষণা দিয়েছে তারা আর তাদের কমিট করা বিনিয়োগ করবে না। ফলে ২ বিলিয়ন ডলার পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন ঝুকির মুখে।
এই নিউজ গুলো এখনও মেইন স্ট্রিম নিউজ পেপার গুরুত্ব দিয়ে ছাপাচ্ছে না কারন তারা খুব সম্ভবত ঘটনা গুলোর গুরুত্বই বোঝে না। বাংলাদেশের পারটনারশিপের কারনে, China Machinery Import and Export Company (CMC) এর নিজস্ব ক্রেডিট রেটিং ডাউন গ্রেড হওয়াটা বাকি সকল বৈদেশিক বিনিয়োগকারিদের জন্যে একটা চিলিং সিগ্নাল যে, তাদের লাভের টাকা তো তারা নিতে পারবেই না, বরং তাদের ইনভেস্টমেন্টের ক্ষতির দায় তাদের ঘাড়ে আসবে। ফলে তাদের বড় অংশ , বিশেষত যাদের মেজরিটি স্টেক আছে এবং বিশেষত যাদের বৈদেশিক মুদ্রায় দায় দেনা পরিশোধ করতে হয়, তারা ধীরে ধীরে দেশ ছাড়া শুরু করবে।
এবং করবে যে শুধু তা নয়, করা শুরু হয়েছে। গতকাল বা পরশু বনিক বার্তায় দেখেছি, বৈদেশিক বিনিয়োগকারিরা দেশ ছাড়া শুরু করেছে।
প্রব্লেম হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় রাস্তায় না খেতে পেয়ে লাশ না পড়া পর্যন্ত ক্রাইসিসকে , ক্রাইসিস মনে করে না। অথবা একটা বিশাল গন আন্দোলনে সরকার পতন না হইলে, তাদের কাছে সংকট যথেষ্ট ক্রিটিকাল মনে হয়না।
ইট ডাজ নোট ওয়ার্ক লাইক দ্যাট। সেই ১৯৯০ থেকেই বাংলাদেশ ম্যাক্রো ইকনমিকালি যথেষ্ট স্টেবল। এখন যেইটা হচ্ছে আপনার স্টাবিলিটির কল কব্জা গুলো লুজ হইতেছে এবং আমরা খুড়িয়ে হাঁটা শুরু করেছি।
কিন্তু এমন হওয়ার কোন কথা ছিলনা। চায়না থেকে ইনভেস্টরদের প্রস্থানের পর বাংলাদেশের প্রধান বেনেফিসিয়ারি হওয়ার কথা।ভারত, মালেয়শিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া সকলেই ইউক্রেইন যুদ্ধের মূল্যস্ফীতির ধাক্কা কাটায় উঠেছে এবং তাদের দেশে বড় অংকের বৈদেশিক বিনিয়োগ হচ্ছে।
কিন্তু, মেজর কোন বিনিয়োগ কারি বাংলাদেশে তো আসেই নাই এবং যারা আছে তারা তারা চলে যাচ্ছে এবং যারা আছে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রিজার্ভ রক্ষার জন্যে ঋণ ডিফল্টের র ডিরেক্ট ইন্ডাইরেক্ট এবং ইন্ডিউসড পরিণতি আছে এবং নিতে হবে এবং নিতে হচ্ছে। চোখ বন্ধ রাখলেই , প্রলয় বন্ধ হয় না।
কোন মন্তব্য নেই
Thanks for your comment