করোনা রোগের ট্রিটমেন্ট (হোম আইসোলেশন পদ্ধতি)
অনেকেই রিকুয়েষ্ট করেছে কিভাবে ট্রিটমেন্ট নিয়েছি তা নিয়ে লিখতে, তাই এই পোস্ট করলাম। আমাদের দেশের করোনার লক্ষন অনান্য দেশের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষনে সাধারণ ফ্লু নাকি করোনা তা টেস্ট ব্যাতিত বুঝতে পারবেন না। আমাদের দেশের কোমর ভাঙা স্বাস্থ্যসেবার কথা কারোর অজানা নয়। ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই দেশে করোনা টেস্ট রেজাল্ট আসতে ৪-১২ দিন পর্যন্ত সময় লাগে! সো, টেস্ট রিপোর্ট আসলে ট্রিটমেন্ট শুরু করবেন এই প্রথা থেকে বের হয়ে আসতে হবে, না হয় পস্তাবেন। আমার মতে যখনই আপনার মধ্যে অসুস্থতা দেখা দিবে তখন থেকেই ট্রিটমেন্ট শুরু করুন। ট্রিটমেন্ট:
➲ প্রথম যেদিন মাথা ব্যথা এবং জ্বর হবে সেদিন থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে এবং চিকিৎসা নেওয়া শুরু করতে হবে। কোন ভাবেই সাধারণ ফ্লু বলে হেয়ালি করা যাবে না। মনে রাখবেন আপনার টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ হওয়ার পরবর্তী ১২-২৪ ঘন্টায় আপনার সমাজ, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, প্রশাসন থেকে বিশাল আকারের মানসিক ধাক্কা খাবেন। এই ধাক্কা সামলাতে পারলে আপনি সুস্থতার অর্ধশত ভাগ এগিয়ে গেছেন। এখন শুধু নিয়ম মানবেন। কোনভাবেই ভেঙে পড়া যাবে না, ভেঙে পড়লেই আপনি হেরে যাওয়ার পথে হাটবেন। নিজেকে নিজেই শক্তিশালী করতে হবে।
➲ সকল ধরনের করোনা রিলেটেড নিউজ দেখা বন্ধ করে দিবেন। যারা সাংবাদিক না হয়েও, করোনার তথ্য শেয়ার করে সাংবাদিক এর ভাত মারছে, তাদেরকে আন ফলো করুন।
➲ অনেক আত্মীয় স্বজন, বন্ধুরা কল দিয়ে জ্ঞান দিবে, অনেক মোটিভেশনাল স্পিচ দিবে। তাদেরকে যতটা পসিবল ইগ্নোর করবেন। মন ভালো লাগলে কথা বলবেন, তবে এরা বিরক্ত করে বেশীই। সুস্থ হলে পরে বুঝিয়ে বলবেন।
➲ আপনি মানসিকভাবে শান্তি পাবেন এমন বিনোদন গ্রহণ করুন, যেমন: মোটিভেশনাল স্পিচ, মিরাক্কেলের মত ফানি শো, বই পড়া
➲ আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করতে হবে। তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, ইবাদত করা। সঠিক নিয়মে ইবাদত করতে হবে। ইবাদত করলে মনে একধরনের প্রশান্তি আসবে। কুরআন পড়বেন, হাদীস পড়বেন, নামাজ পড়বেন সময় মতো। আমি তাহাজ্জুদ ও পড়েছি।
➲ প্রথম যেদিন সিম্পটম দেখা দিবে সেদিন থেকেই পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাবেন। খাবারের প্লেট থেকে ওয়াশরুম পর্যন্ত আলাদা করে ফেলতে হবে। কোনভাবেই আপনার চলাচলের জায়গায় অন্য কাউকে চলাচল করতে দেওয়া যাবে না। কোন কারনে আপনি তাদের চলাচলের জায়গায় ব্যাবহার করতে হলে, "ডাবল ফেস মাস্ক", হ্যান্ড গ্লোভস, শু কাভার, হেয়ার ক্যাপ পরিধান করে ভালো করে হাত, পায়ে, হ্যান্ডসানিটাইজার মেখে যেতে হবে। বাসায় অবশ্যই আলাদা জুতা পরিধান করবেন।
➲ আপনার রুম এবং পরিবারের ব্যাবহারের জায়গায় একটা সেফটি জোন সিলেক্ট করবেন। যেখানে তারা আপনাকে খাবার দিবে। এ জোনে অবশ্যই যখন আপনি বা তারা চলাচল করবে তার ২০ মিনিট পূর্বে "ব্লিচ এর পানি" দিয়ে ডিজইন্সপেক্ট করে নিবেন। আপনিও করবেন, তারাও করবে। এই জোনে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। আপনার খাবারের প্লেট বা আপনার স্পর্শ করা বস্তু তারা যেনো স্পর্শ না করে। তারা যখন খাবার বা দ্রব্যাদি দেয় তখন অবশ্যই তারাও "ডাবল মাস্ক", হ্যান্ড গ্লোভস, শু-কাভার পরে হাত, পায়ে, হ্যান্ডসানিটাইজার মেখে সাবধানে তাদের প্লেটে খাবার নিয়ে আপনার প্লেটে স্পর্শ ছাড়া ঢেলে দিতে হবে।
➲ প্রতিদিন আপনার রুম ও ওয়াশরুম ব্লিচ এর পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন।
➲ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে টেস্ট করাবেন প্রথমদিনই এবং তার দেয়া ঔষধ নিয়ে আসবেন। এছাড়া কাশি, সর্দি, কফ, গলা ব্যাথা এইসবের ঔষধ সংগ্রহ করে রাখবেন।
➲ ভিটামিন সি ও ডি জাতীয় খাবার খাবেন। মাল্টা, আপেল, আম, আনারস এই ফল খাবেন। এছাড়া সর্বোচ্চ পুষ্টিকর খাবার খাবেন।
➲ প্রতি ঘন্টায় ১ বার স্টিম (পানির ভাপ) নিবেন এবং অতঃপর সেই মসলা যুক্ত ১ মগ গরম পানি খাবেন। এছাড়া লেবু+লবন পানি ১ মগ মিক্স করে প্রতি ২০-৩০ মিনিট পরপর খাবেন এবং ১০-২০ মিনিট পরপর গড়গড় করবেন। (এটাই প্রধান ট্রিটমেন্ট) মনে রাখবেন সবচেয়ে উপকারি হচ্ছে ভাপ নেওয়া, এটাই প্রধান। এমন ভাবে ভাপ নিবেন যেনো আপনার নাক ও মুখ দিয়ে ভেতরে বাষ্প প্রবেশ করে। নাকের ভেতর ও গলায় গরম ছ্যাঁকা লাগতে পারে। সহনীয় মাত্রায় নিবেন। উপকরণ: ২ লিটার পানিতে লেবু ৩ টা, এলাচ ১৫ পিস, গোল মরিচ ১৫ পিস, লবঙ্গ ১৫ পিস, আদা ১৫০-২০০ গ্রাম, তেজপাতা ১৫ পিস, দারুচিনি ১০০-১৫০ গ্রাম, কালোজিরা ১০-১৫ গ্রাম, রসুন ১ টা ও লবন পরিমানমত দিয়ে ১০ মিনিট সিদ্ধ করে তারপর স্টিম নিবেন। প্রতিবার সর্বনিম্ন ৪-৫ মিনিট স্টিম নিবেন অতঃপর ১ মগ পানি খেয়ে নিবেন। এটাই প্রধান চিকিৎসা। এই উপকরণ দিয়ে ২ লিটার পানি শেষে আরো ১ লিটার পানি মিশ্রণ করতে পারবেন। মশলার রং যদি কালচে বর্ণের হয়ে যায় তাহলে করবেন না।
➲ মধুর ব্যাবস্থা করার চেষ্টা করবেন। মধু শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বুষ্ট করে। প্রতিদিন সকালে ২ চামচ, রাতে ২ চামচ মধু খাবেন।
➲ কালোজিরা অবশ্যই খাবেন। সাধারণভাবে খেতে না পারলে ভর্তা করে খাবেন। কালোজিরা ও মধুর বিকল্প নেই। কাজেই এই দুইটা খাবেন।
➲ প্রতিদিন অবশ্যই ব্যায়াম করবেন এবং চেষ্টা করবেন সকাল ১১ টায় রোদে থাকার জন্য।
➲ রাত ১২ টার মধ্যেই ঘুমিয়ে যাবেন, সকাল সকাল উঠবেন। নিয়মিত খাবার খাবেন, স্টিম নিবেন, গরম পানি খাবেন, গড়্গড় করবেন।
➲ আপনার জামা কাপড় ৩০ মিনিট ভিজিয়ে তারপর ধুয়ে দিবেন।
➲ ঔষধ সহ যেকোনো প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। কোন পরিবর্তন দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারকে কল করুন। সবগুলো নিয়ম মেনে চলুন, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। ইনশাআল্লাহ সুস্থ হবেন। আমি এই নিয়মে চলেই সুস্থ হয়েছি। স্টিম কিভাবে নিবেন, তা জানা না থাকলে কমেন্ট করুন। উক্ত নিয়ম গুলো আমি মেনেছি। এইগুলা একান্তই আমার পরামর্শ। তাই যে কেউ ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন।
আরও পড়ুনঃ ব্লিচিং পাউডারের সাথে যদি ডেটল বা স্যাভলন মিশাই তখন কি হবে?
কোন মন্তব্য নেই
Thanks for your comment